কমলগঞ্জে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপন

 কমলগঞ্জে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপন


মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাপ্রাণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫২তম জন্মতিথি উপলক্ষে শনিবার (১৬ আগস্ট ২০২৫ খ্রি.) সকালে কমলগঞ্জ কেন্দ্রীয় শ্রীশ্রী দুর্গাবাড়ি প্রাঙ্গণে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর।


জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বেলা ১১টায়  ভানুগাছ বাজার প্রদক্ষিণ করে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।


এসময় প্রনীত রঞ্জন দেবনাথের সভাপতিত্বে এবং প্রত্যুষ ধর এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে  উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির, মৌলভীবাজার জেলা বি এন পি সদস্য মোঃ দুরুদ আহমদ,কমলগঞ্জ উপজেলা বি এন পি যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন, বাংলাদেশ  পূজা উদযাপন পরিষদ কমলগঞ্জ  উপজেলা শাখার সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাশ, ভানুগাছ কেন্দ্রীয় দৃর্গাবাড়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেন্টু দত্ত,সাধারণ সম্পাদক লিটন দত্ত এবং ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সম্পাদকসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।


সকাল ৮টায় মঙ্গলঘট স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শ্রীকৃষ্ণ পূজার্চনা ও অষ্টোত্তর শতনাম কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়।


সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়, যেখানে কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত ভক্তরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, শঙ্খ-উলুধ্বনি ও ভক্তিমূলক সংগীতে অংশ নেন। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সংগীতময় গীতা পাঠ ভক্তদের আধ্যাত্মিক আবেগে ভরিয়ে তোলে।


সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং দুপুরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। দুপুর ১টায় মহাপ্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শেষ হয়।


জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ-১৪৩২ বঙ্গাব্দ, কমলগঞ্জের আহ্বায়ক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ বলেন, “প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক আয়োজন করেছি। ভক্তদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ উৎসবকে মহিমান্বিত করেছে।”


যুগ্ম আহ্বায়ক অর্জুন দেব জানান, “গ্রামগঞ্জ থেকে আসা ভক্তদের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রা অনন্য হয়ে উঠেছে। সামাজিক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”


সদস্য সচিব প্রত্যুষ ধর বলেন,“প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।”


এছাড়া রহিমপুর ইউনিয়নে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে গীতা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ হয়। ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিপ্রাংশু পাল ও সম্পাদক সুবল দেবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাশ, সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যুষ ধরসহ স্থানীয় সুধীজন অংশ নেন।


পাশাপাশি পাত্রখোলা চা বাগান, মুন্সীবাজার, পতনঊষার, মাধবপুর, আলীনগরসহ বিভিন্ন স্থানেও জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নানা ধর্মীয় কর্মসূচি পালিত হয়েছে।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের তাৎপর্য


ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে গভীর রাত্রে মথুরা নগরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হন। তিনি দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্যই প্রযোজ্য।


উৎসবের আবহ


কমলগঞ্জ উপজেলার আশপাশের গ্রামগুলোতে জন্মাষ্টমীকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। বাড়ি-বাড়ি ভোগ রান্না, মন্দিরে আরতি, ভক্তিমূলক গান, শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মিছিল ও শোভাযাত্রা—সব মিলিয়ে কমলগঞ্জ জুড়ে সৃষ্টি হয় আনন্দময় ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ

নবীনতর পূর্বতন